top of page

Location

 

Head office:                                           

22, Municipality Road, DangaPara, Opp. Maiji Bari, Near Hindu Girls School Kalna, East Bardhaman.

 

E-mail:  sumeru1235@gmail.com

 

Title.jpg

মন

আমাদের এই জগতের তথা মহাজগতের মূল স্রষ্টা— মূল চালকই হলো— মন। ছোট্ট একটি মিষ্টি নাম—‘মন’। এই জগতে যা কিছু দেখছি— যা কিছু ঘটছে— যা কিছু সৃষ্টি হচ্ছে ও হয়েছে, সমস্ত জগৎ সৃষ্টির পিছিনেই আছে— ‘মন’। শুধু জীবেরই মন আছে— তা-ই নয়, ঈশ্বর-মনও ‘মন’। সর্বোচ্চ চেতনস্তরের মন।

 

আমরা সজাগ—সচেতন মনের অধিকারী বলেই— আমরা মানুষ। অন্যান্য সমস্ত জীবেরই মন আছে, তবে সেই সব মন হলো— নিম্ন চেতনস্তরের অনুন্নত মন। আজকের উন্নত কম্পিউটারের তুলনায় প্রথম দিকের অনুন্নত কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, সাধারণ মোবাইলফোন প্রভৃতি বিভিন্ন ‘গেজিট’ যেমন— তেমনি।

 

মন হলো— কম্পিউটারের সফটওয়ারের মতো, আর মস্তিষ্ক—স্নায়ুতন্ত্র এবং ইন্দ্রিয়াদিসহ সমস্ত শরীরটা হলো তার হার্ডওয়ার।  আমাদের  অধিকাংশের মধ্যে বর্তমানে দুটি অংশী মন সক্রিয়। এই দুটি সক্রিয় অংশী  মনের একটি হলো— সচেতন মন, আর অপরটি হলো— অবচেতন মন। আমাদের মনরাজ্যে এই অবচেতন মনটি অধিক অংশে বিকশিত এবং অধিক সক্রিয়। সে-ই  এখন প্রধান ভূমিকায় কর্মরত। এই মনটির আছে বিশেষ কিছু গুণ, যাদের ঠিক মতো কাজে লাগাতে পারলে— অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্য লাভ সম্ভব, আপাতদৃষ্টিতে অনেক অসাধ্যকেই সাধন করা সম্ভব। তবে এই মনটির মধ্যে অনেক খারাপ গুণও আছে। এই কারণেই একে নিয়ন্ত্রণ করাও খুব দরকার।

 

ক্রমশ বিকাশমান সচেতন মনটি অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই অল্পাংশে বিকশিত— অল্প সক্রিয়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক। মনেরাখতে হবে, সচেতন মনের মালিক হওয়ার কারণেই আমরা— মানুষ। সচেতন মানুষ।

 

আমাদের এই সচেতন মনের যত বেশি বিকাশ ঘটবে, আমরা ততই বিকশিত মানুষ হয়ে উঠতে পারবো। পূর্ণবিকশিত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে— এই সচেতন মনের বিকাশ ঘটানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর এই সচেতন মনকে দিয়ে— সচেতনভাবে, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন অবচেতন মনকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে, এবং তাকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে— তার খারাপ গুণ গুলির জন্য।

 

কিন্তু যে মনের কারণে আমরা— ‘মানুষ’, -সেই মন সম্পর্কে আমরা অনেকেই বিশেষ অবগত নই, সজাগ-সচেতন নই, —সম্যক জ্ঞান নেই আমাদের। মানব-বিকাশ— দেশের ও সমাজের বিকাশ নিয়ে অনেক উদ্যোগ দেখছি আমরা, কিন্তু উন্নয়নের মূলে আছে যে ‘মন’ –সেই মনোবিকাশের কোনো উদ্যোগ নেই কোথাও।  

 

দেশ-সমাজ-সংসারের যাবতীয় সংকট-সমস্যার সমাধান নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন পন্ডিতগণ— নেতা-নেত্রীগণ, কিন্তু অধিকাংশ সমস্যার মূলে রয়েছে  যে অসুস্থ-বিকারগ্রস্ত— স্বল্পচেতন মন, সেদিকে খেয়াল নেই অনেকেরই। সমস্যার মূল ছেড়ে দিয়ে, —তার উচিৎ প্রতিকার না ক’রে, অধিকাংশ মানুষই তার শাখা-প্রশাখায় সমাধান খুঁজতে— ওষুধ দিতে ব্যস্ত।

 

আত্মবিকাশ শিক্ষাকালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সময়, প্রসঙ্গক্রমে মন সম্পর্কে আরো অনেক জানতে পারবো আমরা।

 

মনই হলো আমাদের প্রধান বিষয়!

“মন সম্পর্কে যে যতটা সচেতন, মনকে যে যতটা জানে এবং মনের উপর যার যতটা দখল, —সে ততটাই বিকশিত মানুষ। যেদিন তুমি মনের মালিক হতে পারবে— বুঝবে, সেদিন তুমি পূর্ণবিকশিত মানুষ হলে।

জীবনে উন্নতি করতে চাইলে— মনের বিকাশ ঘটাতে হবে। যে ব্যক্তি মন সম্পর্কে যত জ্ঞানী— মন-শক্তি ও মন-সম্পদে যত বেশি সমৃদ্ধ, এই মানব জীবনে সে ততটাই ধনী। মনোবিকাশের লক্ষ্যে— পূর্ণবিকশিত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে— সচেতনভাবে অগ্রসর গতে হবে আমাদের। পূর্ণবিকশিত মানুষ হয়ে ওঠাই মানব জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য।”   —মহামানস  

    

আর্ট অফ হ্যাপী লার্নিং

ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মা-বাবাদের উদ্দেশে কিছু কথা

 

আপনার সন্তানকে যুক্তিবাদী হতে শিক্ষা দিন। এমন কিছু শেখাবেন না বা করতে বলবেন না, যার কোনো যুক্তি নেই। যার অর্থ অথবা ব্যাখ্যা আপনার নিজেরই জানা নেই।

 

আপনার সন্তানকে অধিকাংশ সময়ে উচ্চস্বরে বা চেঁচিয়ে কিছু বলবেন না, অথবা গাল-মন্দ করবেন না। তাতে, ভবিষ্যতে সে আর আপনার কথায় গুরুত্ব দেবেনা। আপনার কথা শুনবে না। প্রয়োজনে, চোখ-মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন, আপনি তার উপর অসন্তুস্ট হয়েছেন।

 

সন্তানকে ভালোবাসবেন, কিন্তু ভালোবাসার দাস হবেন না। তাহলেই সে আপনার দুর্বলাতার সুযোগ নিতে পারে। অধিক আদর ও প্রশ্রয় দেবেন না। তার চাহিদা বাড়াবাড়ি হলে— অস্বাভাবিক হলে, তাকে বুঝিয়ে বলুন। প্রয়োজনে একটু কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে।

 

সন্তানের সামনে নিজেকে বা নিজেদেরকে সংযত রাখুন। মা-বাবার মনোমালিন্য—দ্বন্দ্ব—অশান্তির প্রভাব যেন সন্তানের উপর না পড়ে।    

 

সন্তানের সাথে নিয়মিতভাবে বাস্তবের নানা শিক্ষনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করুণ। সন্তানকে সংসারের এবং সমাজের বাস্তব অবস্থা একটু একটু করে বুঝিয়ে বলুন। সন্তানের কাছে সেরা শিক্ষক/শিক্ষিকা হয়ে উঠুন। সন্তানের কাছে শ্রদ্ধেয়-আদর্শ-গুরুত্বপূর্ণ— পরম আকাঙ্খিত হয়ে উঠুন। নিজে সেরা হয়ে উঠুন— সন্তানকেও সেরা ক’রে তুলুন।

 

সন্তানের সামনে পরচর্চা—পরনিন্দা করবেন না, এবং তাকে এ’ ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন না।

 

অলৌকীক বা কাল্পনিক কোনো গল্প শোনালে, অবশেষে তাকে বলুন— এটা একটা কাল্পনিক গল্প।

 

সন্তানকে মিথ্যা কথা বলা, তার সাথে মিথ্যা আচরণ করা এবং তার মিথ্যাচরণে প্রশ্রয় দেওয়ার কুফল ভোগ করতে হবে আপনাদের সবাইকে— সারা জীবন ধরে।

 

সন্তানের সাথে সহজভাবে খোলামেলা আলোচনা করুণ, এবং তাকেও করতে দিন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তিকে অধিকাংশ মানুষই গুরুত্ব দেয়না— পাত্তা দেয় না।

 

সন্তানের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না—সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। তাই বলে, সব সময় খুঁত খুঁতে হলে হবেনা। উদ্বিগ্ন হলে হবে না।

 

নিজের আচরণগত সমস্যা থাকলে, তার জন্য মনোবিদ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে আত্মবিকাশ (সেলফ-ডেভালপমেন্ট)-এর জন্য আমাদের ‘মহামনন কেন্দ্রে’ আসুন।

 

ভাল-মন্দ খাওয়ালে, দামীদামী স্কুল—শিক্ষক এবং অন্যান্য সবকিছু দিয়ে সুখে-সাচ্ছন্দে রাখলেই সন্তান মানুষ হয়ে যায়না। অবশ্যই সাধারণ প্রয়োজনটুকু মেটাতে হবে। কিন্তু তার সঙ্গে চাই আরো অনেক কিছু—যা সবসময় অর্থ দিয়ে পুরণ করা যাবেনা। সন্তান মানুষ করতে চাই আন্তরিক ইচ্ছা, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং জ্ঞান, আর সেই জ্ঞানানুসারে তার প্রয়োগ করতে হবে।

এখানে ভাল-মন্দ মানে— যা মুখে ভাল লাগে, কিন্তু পেটে গিয়ে মন্দ করে। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীর সাথে সাথে সন্তানকে খাওয়ানোর নিয়ম— স্বাস্থ্যবিধি জানতে হবে। জানতে হবে, সন্তানের সাথে কখন কিরূপ ব্যবহার করতে হবে— তাও।  

 

আজকের অনেক মা-বাবাই যথাসাধ্য বিনিয়োগ ক’রে, অক্লান্ত পরিশ্রম করেও সন্তানকে মানুষ ক’রে তুলতে না পারার কারণই হলো— যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব আর সুস্থতার অভাব।

 

সন্তানের মধ্যে আচরণগত ত্রুটি থাকা সত্বেও, অনেক মা-বাবাই স্নেহে অন্ধ হয়ে সেগুলি সম্পর্কে সচেতন হয়না— প্রতিকারে সচেষ্ট হয়না। মনোবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে, বরং সন্তানের সেই ত্রুটিকেই অনেকে গর্ব ক’রে সবার কাছে জাহির ক’রে থাকে।

 

তাহলে ভেবে দেখুন, কী হতে পারে তার পরিণতি!

 

 

বেশি রাগ—উত্তেজনা—অস্থিরতা, বেশি জেদিভাব— অধৈর্য—অসহিষ্ণুতা, অপরাধ প্রবণতা, অথবা আলস্য, বিষন্নতা এগুলি সমস্তই জীবনে সাফল্যলাভের পক্ষে অন্তরায় হয়ে থাকে।

 

অনেক মা/বাবা নিজের এবং নিজের সন্তানের দোষ দেখতে পাননা। অপরকে দোষি করেই তারা আত্মতৃপ্তি লাভ ক’রে থাকেন। আবার অনেকে প্রায় সময়েই সন্তানকে অযথা বকাবকি মারধোর ক’রে থাকেন। এর কোনোটাই সন্তানের পক্ষে ভালো হতে পারেনা।

 

বুঝতে হবে— বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, এবং ধৈর্য ধ’রে সন্তানকে বোঝাতে হবে। তাতেও যদি কাজ না হয়, তখন মনোবিদ বা চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। অনেকসময়, মা-বাবার দোষ— ক্রোধ-উত্তেজনা প্রভৃতি সন্তানে সংক্রামিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, প্রয়োজনে মা-বাবাকেও চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।      

                  

 

সবশেষে বলি, আপনাদের মধ্যে কারো যদি মনেহয়, ‘—আমি এতোগুলো ছেলে-মেয়ে মানুষ করেছি, আমাকে কিনা ছেলে মানুষ করা শেখাচ্ছে!’ দয়াকরে আমাকে ক্ষমা করবেন, এই পরামর্শগুলি মোটেই তার জন্য নয়। যাঁরা এগুলি সম্পর্কে আগ্রহী— যাঁরা এগুলি তাদের জীবনে গ্রহন করতে এবং প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক, আমার এই পরামর্শ শুধু মাত্র তাদের জন্য।                       

 

বিয়ের পরেপরেই সন্তান নেওয়া অনুচিত। একজনকে পৃথিবীতে নিয়ে আসাটা ঠিক হবে কি না, তার প্রতি কোনো অন্যায়—অবিচার হবে কি না, —তা’ অনেকদিন ধরে খুব ভালোভাবে বিচার ক’রে দেখতে হবে। অতঃপর, সচেতন মন যদি সবুজ সঙ্কেত দেয়, তবেই সন্তান নেবেন।

 

স্নতান নেওয়ার পূর্বে অনেকদিন ধরে দেখতে হবে— আপনাদের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে কি না, সম্পর্ক ভেঙে যাবার সম্ভাবনা আছে কি না, উভয়ের মধ্যে বংশগতভাবে সংক্রামিত হবার মতো রোগ-ব্যাধি আছে কি না। উভয়ের মধ্যে সাধারণ সুস্থতা—স্বাভাবিকতা আছে কি না— দেখা দরকার সবার আগে। তারপরে অন্যান্য বিষয় বা ক্ষেত্রগুলি বিচার ক’রে দেখতে হবে। আগামী দিনে— পৃথিবী আমাদের সন্তানদের পক্ষে বাসযোগ্য থাকবে কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার আছে।     

 

 

মেন্টর—কোচ

 

কোনো বিষয়ে শিক্ষার সাথে সাথে, যদি সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করতে চাও, তাহলে অবশ্যই একজন বহুদর্শী—অভিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য মেন্টর অথবা মেন্টর কাম কোচের সাহায্য নিতে হবে তোমাকে। যিনি হবেন— একদিকে উপদেষ্টা, আবার অপরদিকে প্রশিক্ষক।

 

গান-বাজনা, অভিনয়, ছবিআঁকা, খেলাধুলা, পড়াশোনা অথবা আধ্যাত্মিকতা— যে কোনো ক্ষেত্রেই— প্রথাগত শিক্ষা গ্রহনের সাথে সাথে, অথবা শিক্ষা গ্রহনের পূর্বে বা শুরুতেই ঐরূপ একজন উচ্চশ্রেণীর গুরুর পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। যিনি তোমাকে পরীক্ষা ক’রে— তোমার আগ্রহ, যোগ্যতা, পরিবেশ-পরিস্থিতি— সুবিধা-অসুবিধা এবং অন্যান্য ক্ষমতা-অক্ষমতা বুঝে, তোমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।

 

কোন্‌ বিষয় নিয়ে এগিয়ে গেলে ভালো হবে, কিভাবে এগিয়ে গেলে সর্বাধিক সাফল্য আসবে, কোথায় তোমার ঘাটতি আছে— ভুল-ত্রুটি আছে, কিভাবে নিজেকে ত্রুটিমুক্ত করবে, —দেখিয়ে দেবেন তিনি। অনেক অজানা পথের সুলুকসন্ধান, অনেক অজানা সম্পদ পাওয়া যাবে তাঁর কাছে। প্রতিভার সঠিক বিকাশ ঘটাতে এবং জগতের কাছে তার যথাযথ প্রকাশ ঘটাতে সাহায্য করবেন তিনি তোমাকে।

 

অন্ধ-আবেগ— অন্ধ-বিশ্বাস, মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে সাফল্য নামক মরীচিকার পিছনে ছুটে চলা— হিতাহিত জ্ঞানশূন্য মানুষের জন্য একজন মেন্টরের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। বিনীত—অনুগত—উদ্যোগী—পরিশ্রমী সমঝদার ছাত্র-ছাত্রীই একজন মেন্টরের কাম্য।

 

বহু গুণি—প্রতিভাবান মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, অনেক উচ্চস্থানে পৌঁছেও, নক্ষত্র-পতন ঘটেছে— শুধুমাত্র একজন উপযুক্ত মেন্টরের অভাবে। আবার, স্তাবক পরিবেষ্টিত— অহঙ্কারী অনেক নক্ষত্রই খসে পড়েছে গুরুর উপদেশ—পরামর্শ অগ্রাহ্য করার ফলে।

 

আজকের দিনে, শিক্ষাজগতে উচ্চশ্রেণীর উপদেষ্টা গুরুর বড়ই অভাব! থাকলেও, তাঁরা আছেন অন্তরালে। অনেকেই তাদের সন্ধান জানে না। অজ্ঞান-অবুঝ মানুষের অত্যাচারের ভয়েও অনেকে অন্তরালে থাকা পছন্দ করেন। অনেক মানুষই দিশাহারা হয়ে ঘুরছেন— শুধুমাত্র একজন সদ্‌গুরুর কৃপা লাভের উদ্দেশে।         

 

  

মানসিক উন্নতির সব চাইতে ভালো উপায় হলো—

 

নিজের সম্পর্কে— নিজের কথা—চিন্তা—মনোভাব ও কর্ম সম্পর্কে সচেতন থাকা। আমি যা ভাবছি— যা করছি— যা বলছি— সব কিছুর উপর আমার সজাগ দৃষ্টি থাকবে। মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে গেলেও, আবার সচেতন হয়ে উঠতে হবে। যুক্তি-বিচারসহ এই অভ্যাস— যে কোনো মানুষকে অতি উন্নত মনের মানুষে পরিণত করতে সক্ষম।

কি করে উন্নতি বোঝা যাবে? যার নিজের সম্পর্কে যত বেশি স্পষ্ট ধারণা, —সে ততটাই উন্নতি লাভ করেছে বুঝতে হবে। মাঝে মাঝে এর পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।        

  

*মহামানস প্রদর্শিত ম্যানমেকীং এডুকেশনের একটি অঙ্গ।

উত্তেজনা— ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ

 

মস্তিষ্কের উত্তেজনা— মনের উত্তেজনা, উত্তেজক চিন্তা-ভাবনা— আমাদের মনেরাখা প্রয়োজন এমন বিষয়গুলি ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরসাথে যদি যুক্ত হয়— দুর্বলতা আর অস্থিরতা, তাহলে তো সোনায়-সোহাগা!

 

ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকের মধ্যেই কাম-উত্তেজনার প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। অত্যাধিক কামোত্তেজনার কারণে কত প্রতিভা— কত জীবন যে নষ্ট হয়ে যায়, —তার কোনও হিসেব নেই। কামোত্তেজনা আমাদের মস্তিষ্ক ও মনের উত্তেজনা ঘটায়। শুধু তা-ই নয়, এর বাড়াবাড়ি হলে— আমাদেরকে দুর্বল—অস্থির—অসুস্থ ক’রে তুলতে পারে।

 

প্রতিনিয়ত ঘ’টে চলা— চিরকালীন এই সমস্যা নিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের মা-বাবারাও ভীষন অসহায় বোধ ক’রে থাকেন। নিরুপায় হয়ে তারা কপালের হাতে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হন।

 

কিন্তু, প্রাচীনকালের ঋষিদের হাতে ছিল এর প্রতিকার ব্যবস্থা। তাঁরা বিশেষ কিছু ভেষজের দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের সাময়ীক উত্তেজনার প্রশমন ঘটাতে পারতেন। ধারাবাহিকভাবে জ্ঞান-চর্চার অভাবে— এ’রকম অনেক কিছুই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক স্বল্প-জ্ঞানী মা-বাবা আবার এর প্রয়োগ ঘটাতে ভীত হয়ে ওঠেন!

 

কোনোকিছু তলিয়ে বোঝার জন্য যে মানসিক পরিশ্রমটুকু প্রয়োজন, —তাতে অনেকের মধ্যেই অনিহা দেখা যায়, ফলে যে তিমির— সেই তিমিরেই থেকে যাই আমরা।

 

প্রাচীন ঋষিরা ছাত্র-ছাত্রীদের যৌনক্ষমতার বিনাশ না ঘটিয়ে, তাঁরা এই কামোত্তেজনাকে বর্ধিত ক’রে তোলে যে অগ্নিরূপ ‘পিত্ত’— তার প্রশমন ঘটাতেন। বর্তমানে আমাদের হাতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধও আছে— যার দ্বারা কামোত্তেজনার আধিক্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তবে, যে কোনো ভেষজেরই অপরিমিত—যথেচ্ছ ব্যবহার যে ক্ষতিকর, —তা’ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

 

উত্তেজনার পিছনে অসুস্থতা একটি বড় কারণ। শরীরে অর্জিত বা বংশগত রোগ-ব্যাধি, নানা প্রকার রোগবিষ, ক্রিমি, জীবানু—ফাঙ্গাস প্রভৃতি আমাদের বিভিন্ন অর্গানসহ মনের উত্তেজনা ঘটিয়ে— আমাদেরকে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে অক্ষম ক’রে তোলে। তাই, এ’সম্পর্কে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে, এবং যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

নির্বিচারে যথেচ্ছ আহার— উত্তেজনা সৃষ্টির পিছনে আর একটি বড় কারণ। আমাদের প্রকৃতি অনুসারে, প্রকৃতির প্রকৃতি অনুসারে— অর্থাৎ পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং ঋতু অনুসারে, খাদ্য-পানীয় নির্বাচন করা উচিত। এর অন্যথা হলেই, তার কুফল ভোগ করতে হবে, তার জন্য আমাদের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি শিকার করতে হতে পারে।      

 

শরীর-মনে উত্তেজনার অভাব দেখা দিলে, চিকিৎসা করাতে হবে। তার জন্য নিয়মিতভাবে উত্তেজক খাদ্য বা পানীয় গ্রহন করা একেবারেই উচিৎ নয়। উত্তেজনাকর খাদ্য—পানীয় —নেশাজাত দ্রব্য আমাদের শরীর-মনের স্বাভাবিক অবস্থা এবং ব্যবস্থা বা সিস্টেমকে নষ্ট ক’রে দিয়ে— অসুস্থ-অস্বাভাবিক ক’রে তোলে। এরফলে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়না।

 

অধিকাংশ সময়েই যদি মাথার মধ্যে হাজারো এলোমেলো— বিক্ষিপ্ত চিন্তা, নানা রকমের ধারনা বা আইডিয়া ঘোরাঘুরি করতে থাকে, মন যদি কোনো একটা বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে গুছিয়ে চিন্তা করতে অক্ষম হয়, একটা বিষয়কে বা ছবিকে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে অক্ষম হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেই মন খুবই অস্থির। এই অস্থির মন, যা পড়ে— যা শেখে, তা’ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনা, অচিরেই তা’ বিস্মৃত হয়।    

 

      

ভবিষ্যতের কথা ভেবে—

 

অর্থ উপার্জনের জন্য আমরা বহু মানুষই এমন অনেক কাজ করি, যা ঠিক আমাদের পছন্দের কাজ নয়। কিন্তু অর্থলাভের আশায় এবং সেই অর্থ দিয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং পছন্দমতো সম্পদলাভের আশায়— আমরা বেশ মন দিয়েই কাজ ক’রে থাকি। কাজ করতে করতে— আস্তে আস্তে সেই কাজের প্রতি একটা ভাললাগার সম্পর্কও গড়ে ওঠে।

 

আমাদের মাথায় এই চিন্তাও থাকে— যে, কাজটা যদি ভালভাবে না করতে পারি, তাহলে চাহিদামতো অর্থ লাভ হবেনা। —এই চাহিদার ফলে, আমরা ক্রমশ সেই কাজে দক্ষ হয়ে উঠি, অথবা সেই কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।

 

ঠিক সেই রকম, কোনো পাঠ্য বিষয় যদি তোমাদের মন-পসন্দ্‌ নাও হয়, তবু তোমরা সেই বিষয় ভালভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর— কিসের আশায়? —না, ভালো নম্বর পাবে ব’লে! ভালো নম্বর বা ভালো ‘মার্কস’ পেয়ে পাশ করতে পারলে, সবার কাছে তোমার দাম বেড়ে যাবে অনেক! সব জায়গাতেই তোমার খাতির-যত্ন —সমাদর বেড়ে যাবে! —তোমাকে ভালবাসবে সবাই!

 

এইভাবে— এক সময় তুমি প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করতে পারবে। যার দ্বারা তুমি তোমার খুশি মতো— সাধ মিটিয়ে অনেক কিছু কিনতে পারবে, —অনেক কিছু করতে পারবে, —অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ ভোগ করতে পারবে! তুমি শুধু নিজেই সুখ-আনন্দ পাবে— তাই নয়, সেই সাথে তুমি তোমার প্রিয়জনদেরও সুখ-স্বাচ্ছন্দ—আনন্দ দিতে পারবে তখন!

 

একান্তে বসে— মাঝে মাঝে সেই আনন্দ-উজ্বল ভবিষ্যতের কথা ভাবো— কল্পনা কর, দেখবে, ভাল না লাগা বিষয়গুলিও কেমন ভালোলাগতে শুরু করবে!

 

তাছাড়া, এখন যে বিষয়টি তোমার ভালো লাগছেনা, তার ব্যবহারিক প্রয়োজন অনুভব করতে না পারার কারণে, ভবিষ্যতে তাকে যে প্রয়োজনে লাগবেনা, এমন কথা জোড় দিয়ে বলা যায়না।

 

যেমন আমার কথাই ধর, স্কুলে পড়ার সময় বীজগণিত বা ‘এলজেব্রা’ আমার ভালো লাগতো না। তার ব্যবহারিক প্রয়োজন অনুভব করতে পারতাম না ব’লে। ওটাযে কি কাজে লাগবে— বুঝতে পারতাম না তখন। কিন্তু এখন, এই বয়েসে— আমি যে সমস্ত দার্শনিক তত্ত্ব এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের রুপ-রেখা তৈরী করেছি, সেগুলিকে পন্ডিত সমাজের কাছে উপস্থাপিত করতে— অঙ্কের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে, —প্রয়োজন হচ্ছে সেই বীজগণিতের। যাকে আমি অবহেলা ক’রে এসেছি এতদিন!

 

তাহলেই বুঝতে পারছো, কাকে যে কখন কার প্রয়োজন হবে— কেউ বলতে পারেনা।* তাই শেখার সুযোগ যখন আছে— শিখে নাও, ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে শেখার সুযোগ হয়তো আর নাও পেতে পারো।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

 

*এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথাও বলি, ঠিক এই কারণেই সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা দরকার। সবার সাথে ভালোব্যবহার— সাফল্য লাভের পথকে সুগম ক’রে তোলে।   

     

 

     

 

Your details were sent successfully!

bottom of page