মানবসেবা : কিছু কথা
মানবসেবা কিছু কথা
মানুষের সেবা করা— মানুষের উপকার করা— মানুষকে সাহায্য করা— এ’ হলো মানুষের অন্যতম কর্তব্যকর্ম। পরস্পর সহযোগিতার মধ্য দিয়েই মানুষ আজ এতটা উন্নত জীব হতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ আরো অনেক বেশি উন্নত হতে পারতো— আরো অনেক এগিয়ে যেতে পারতো, যদি তাদের কারো কারো মধ্যে অসহযোগিতা— হিংসা-বিদ্বেষ-শত্রুতার অজ্ঞান-অসুস্থ মনোভাব না থাকতো। মানুষের এই আত্ম-ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তিই— মানুষের অধিকাংশ সংকটের মূল কারণ।
নিজেদের স্বার্থেই—এই সংকট থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে আমাদের। বুঝতে হবে এবং বোঝাতে হবে— একজন মানুষ হিসাবে তুমি যে সুযোগ-সুবিধা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য— অধিকার প্রভৃতি ভোগ বা উপভোগ করছো, —সে সবের পিছনে রয়েছে অজস্র মানুষের অবদান। এ’ সমস্ত শুধু ভোগ করলেই চলবেনা, তোমাকে তোমার পরিবার ছাড়াও— অপরাপর মানুষের জন্যেও যথাসাধ্য দিয়ে যেতে বা ক’রে যেতে হবে। তবেই মানবজাতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব হবে। আর, এ’ ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে তোমাকে।
আমাদের চারিপাশে অনেক মানুষকেই বিভিন্ন প্রকারের সেবা ও সহযোগিতামূলক মহতী উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। এ’ সবেরই প্রয়োজন আছে। তবে, এর পাশাপাশি— এও ভাবতে হবে, কোন্ সেবা— কোন্ সময়ে— কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং কোন্ সেবার দ্বারা মানুষ কতটা উপকৃত হবে— লাভবান হবে, আর সেই উপকারের স্থায়ীত্ব কালই বা কত।
এছাড়াও, ভেবে দেখতে হবে, কী মনোভাব নিয়ে সেই সেবাকর্ম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। —তা’ কী মানুষ হিসাবে তার দায়ীত্ব— কর্তব্য কর্ম, নাকি— তার পিছনে কোন ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য অথবা সরাসরি কিছু পাওয়ার আশা আছে?!
বিভিন্ন ধরণের উপকার বা লাভের স্থায়ীত্বকাল— বিভিন্নরূপ হয়ে থাকে। তা’ কয়েক ঘন্টারও হতে পারে, আবার কয়েক দিন— অথবা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরও হতে পারে। আবার, সর্বদা শুধু সময় দিয়েই তার বিচার করা যাবেনা। অনেক ক্ষেত্রে স্বল্প সময়কাল স্থায়ী সেবারও গুরুত্ব অপরিসীম হতে পারে।
ছোট—বড়, স্বল্পকালীন—দীর্ঘকালীন সেবা এবং স্বল্পস্থায়ী—দীর্ঘস্থায়ী উপকার— এ’ সবেরই প্রয়োজন আছে। তবে দেখতে হবে, সেই সেবার নামে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি অথবা ধর্মীয় দান—ভিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষকে ভিখারী বানানো হচ্ছে কি না, —ভিখারীসুলভ মনোভাব গ’ড়ে তোলা হচ্ছে কি না!
প্রকৃত সেবা— মানুষের আপৎকালীন সাহায্য ছাড়াও, মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে—, দেহ-মনে সুস্থ—সমর্থ, জ্ঞান ও চেতনায় সমৃদ্ধ ক’রে তুলে’ তা’কে যথেষ্ট বিকশিত মানুষ— আত্ম-জ্ঞানী মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এ-ই হলো চিরস্থায়ি সেবা।
মানুষের অধিকাংশ দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা ও সমস্যার মূলে আছে যে জ্ঞান ও চেতনার স্বল্পতা এবং শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, সেই মৌলিক অভাবকে দূর করতে, কেউ যদি যুক্তিসম্মত—কার্যকর পথে অগ্রসর হয়— সে-ই হবে সবচাইতে বড় মানবসেবা!