সাম্প্রতিক সমস্যা
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, আজকের অনেক শিশুই সঠিক ভাবে ক্রমশ পরিপক্ক হয়ে না উঠে, এরা ক্যাঁটপাকা বা ইঁচরে পাকা— সবজান্তা হয়ে উঠছে।
সঠিক জ্ঞানের অভাবকে এরা চালাকি দিয়ে পুরণ করতে চাইছে। নিজেদেরকে মহাপন্ডিত প্রতিপন্ন করার এক অদ্ভূত প্রতিযোগীতা চলছে যেন। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়, সবাই নিজের নিজের কথা শোনাতেই ব্যস্ত। ছলে-বলে-কৌশলে –যেনতেন প্রকারে জিততেই হবে, কাজে নয়—কথায়। জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্খার চাইতে জ্ঞান দানের আগ্রহ বেশি।
বর্তমানে, অনেক শিশুর চেতনা— বোধশক্তি –আগেকার দিনের শিশুদের চেতনা থেকে অনেক বেশি। আমরা এখন এক বিশেষ পার্থিব সময়ে অবস্থান করছি। এই যুগ-সন্ধিক্ষণে জন্ম গ্রহন করা মানুষের চেতনা— যেন প্রায় চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আজ যে জন্মগ্রহন করেছে, তার চাইতে বেশি চেতনার অধিকারী হবে— আগামীকাল জন্ম নেবে যে শিশুটি।
কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, শিশু তার পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাকেন্দ্র থেকে সঠিক শিক্ষা না পেয়ে, বরং ভুল শিক্ষা লাভ করার ফলে, তারা এক অদ্ভূত –বিকৃত মনের মানুষ হয়ে উঠছে। এতো ভালো চেতনাশক্তি –গ্রহন ক্ষমতা –বোধশক্তি থাকা সত্বেও, সব মাটি হয়ে যাচ্ছে –সঠিক শিক্ষার অভাবে।
এর পিছনে উচিত শিক্ষার অভাব ছাড়াও, রয়েছে অসুস্থতা এবং অযথা খাদ্য-পাণীয় গ্রহণসহ –অযথা আচার-আচরণ। যার পিছনে রয়েছে জ্ঞানাভাব বা স্বল্প জ্ঞান। ফলে, তারা হয়ে উঠছে— উদ্ধত-অস্থির, উত্তেজিত ও অপরাধ প্রবণ।
শিশু প্রথমেই যাদের সংস্পর্শে আসছে, এবং যাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে, সেই মা-বাবা-ই তো ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত। ফলে, তারা একটি শিশুকে মানুষ ক’রে তোলার পরিবর্তে অমানুষ ক’রে তুলতেই বেশি পারঙ্গম। শিক্ষক/শিক্ষিকাদের অবস্থাও তদ্রুপ। মানুষ করাতো দূরের কথা, বাস্তব অবস্থা –পরিবেশ-পরিস্থিতি, দুনিয়ার হালচাল সম্পর্কেই এদের অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। জানার আগ্রহও নেই। মোহাচ্ছন্নের মতো অলীক সুখ, অন্ধ-বিশ্বাস আর কুসংস্কার নিয়েই এরা মশগুল হয়ে আছে! মানুষ হয়ে ওঠা –মনোবিকাশ এদের কাছে একপ্রকার অলংকৃত কথা বা কথার কথা।
এমনও দেখা যাচ্ছে, শিশুর মা-বাবা তাদের অজ্ঞান-অন্ধত্ব জনিত ভুল স্বার্থ বা ক্ষুদ্র স্বার্থ পুরণের উদ্দেশে শিশুকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, অপরাধ করতে শেখাচ্ছে, মনোদুষণ ঘটিয়ে অন্যায় কাজে প্ররোচনা দিচ্ছে। শিশুর মুখে তুলে দিচ্ছে এমনসব খাদ্য-পাণীয় –যা শিশুকে অসুস্থ বিকারগ্রস্ত ক’রে তুলছে। মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অন্যান্য মানুষদের চেতনা এদের তুলনায় অনেক কম হওয়ায়, এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।