ঈশ্বর প্রেম
ঈশ্বর প্রেম
প্রকৃত ভালবাসা গ’ড়ে ওঠে সমানে সমানে। একজন উচ্চাসনে— আর একজন নিম্নাসনে, একজন উচ্চশ্রেণীভুক্ত—অপরজন যদি হয় নিম্ন শ্রেণীভুক্ত, সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অন্ধ আবেগবশতঃ ভালবাসা গ’ড়ে উঠলেও তা’ স্থায়িত্ব লাভ করে না। অথবা একপেশে বা একতরফা প্রেম হতে পারে তা’। —যাতে সঠিক ভালবাসার সম্পর্ক গ’ড়ে ওঠে না।
ভালবাসা হতে হবে প্রায় সমানে সমানে। যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে বা ভালবাসতে চায়, যারা ঈশ্বর প্রেমে মাতোয়ারা, তাদের ক্ষেত্রেও এ’কথা প্রযোজ্য। ঈশ্বরের সাথে ভালবাসার মধুর সম্পর্ক গ’ড়ে তুলতে চাইলে, তোমাকে প্রথমে ঈশ্বরকে জানতে হবে— তার প্রকৃত স্বরূপে। যদি কাল্পনিক কোনো ঈশ্বররূপকে তুমি ভালবেসে থাকো, তাহলে ভবিষ্যতে যখন তুমি তার প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারবে, তখন তোমার ভালবাসার ভিত ন’ড়ে যাবে, পায়ের তলা থেকে মাটি স’রে যাবে। আর উন্মাদের মতো চিরকালই যদি তুমি তোমার কল্পনার ঈশ্বরকে নিয়ে ম’জে থাকতে পারো, যদি আসল ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো উত্তর— কোনো প্রতিদান আশা না করো, তাহলে তুমি অবশ্যই সুখে থাকতে পারবে। কিন্তু সে হবে একতরফা বা অলীক ভালবাসা, অথবা ধনীর দুলালের প্রতি কাঙালিনীর ভালবাসার মতো। যদি ঈশ্বরকে প্রকৃতই ভালবাসতে চাও, তাহলে ঈশ্বরকে তার প্রকৃত স্বরূপে জানার পর— তোমাকে উঠতে হবে, উন্নীত হতে হবে ঈশ্বরের নিকট স্তরে। তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এবং ঈশ্বরের কাছে একান্তভাবে প্রার্থনা করতে হবে, যাতে তুমি তার ভালবাসার উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারো। এই হলো— মহাসাধনা।
এটা ভেবোনা ঈশ্বর তার সমস্ত সৃষ্টিকেই ভালবাসে এবং সমান ভালবাসে। পূর্বে ঈশ্বর এমন বহু কিছু সৃষ্টি করেছে, যা তার পছন্দমতো না হওয়ায় সে-সমস্ত সে ধ্বংস ক’রে ফেলেছে। ভালো জিনিসটাই যেমন তুমি বেশি ভালবাসো, ঈশ্বরও তেমনি। তাই, সর্বাগ্রে তোমাকে ভালো হয়ে উঠতে হবে। যাতে, আর সবার সাথে সাথে ঈশ্বরও তোমায় ভালো না বেসে থাকতে না পারে। তাই ঈশ্বরের কাছে জ্ঞান-চেতনা লাভের জন্য প্রার্থনা করো, ধনাত্মক হয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করো, এবং সেই সাথে তা’ লাভের জন্য সচেষ্ট হও। শরীরে—মনে—প্রাণে সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়ে উঠতে চেষ্টা করো। সুন্দরকে শুধু তুমি একাই ভালবাসো— তা’ নয়, ঈশ্বরও সুন্দরের পূজারী। তাই সব দিক থেকেই সুন্দর হয়ে ওঠো। তোমার প্রার্থনা এবং ঐকান্তিক চেষ্টা দেখে, খুশী হয়ে যদি সে তোমায় ভালবাসতে, তোমার ভালবাসা পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে, তখন সে তোমাকে উপরে উঠতে সাহায্য করবে— তোমাকে উন্নীত ক’রে তুলবে। ফলে উভয়ের মধ্যে সমতা সৃষ্টি হবে, নৈকট্য সৃষ্টি হবে— নিবিড় ভালবাসার সম্পর্ক গ’ড়ে উঠবে তখন।
(‘মহাআনন্দ মন্ডল’-এর ভক্তিযোগী—শাশ্বতপ্রেমীদের উদ্দেশে মহামানসোক্তি)