মহাধর্ম (পর্ব-২)
প্রচলিত ধর্মগুলির সাথে মহাধর্মকে গুলিয়ে ফেললে হবেনা। মহাধর্ম হলো আমাদের প্রাথমিক ধর্ম— মৌলিক ধর্ম— মানব ধর্ম। সর্বাঙ্গীন সুস্থতাসহ মনোবিকাশের পথে এগিয়ে চলাই এই ধর্মের মূল কথা।
আমরা অধিক অংশেই অন্ধ-আবেগপ্রবণ অবচেতন মনের দ্বারা চালিত হই বলেই আমাদের এত দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা। আমাদের সচেতন মন এখনও পর্যন্ত তেমন বিকশিত নয়। সচেতন মনের বিকাশ ঘটানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। যার সচেতন মন যত বেশি বিকশিত, সে ততটাই বিকশিত মনের মানুষ। যে যত বেশি বিকশিত সে তত বেশি জীবনকে উপভোগ করতে সক্ষম।
একেতো আমরা বেশিরভাগ সময়েই (অবচেতন মনের) অন্ধ-বিশ্বাস— অন্ধ-আবেগের দ্বারা চালিত হই, তার সাথে যদি আবার যুক্ত হয় অসুস্থতা— অসুস্থ মানসিকতা, তখন সোনায় সোহাগার মতো— আমাদের ভিতরটা একেবারে নরকে পরিণত হয়। জীবন দুর্বিসহ—বিষময় হয়ে ওঠে তখন। ক্রোধ—অসহিষ্ণুতা—হিংসা—বিদ্বেষ—নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে আমাদের মন।
যার যা আছে সে অপরকে তা-ই দিতে পারে। যার অন্তরে সুখ আছে—শান্তি আছে, সে অপরাপর মানুষকে তা’ শেয়ার করতে সক্ষম। যার অন্তর বিষে পরিপূর্ণ সে বিষই উদ্গিরণ করতে পারে। অমৃত সে দেবে কোথা থেকে!
অন্তরকে বিষ মুক্ত— সুস্থ ক’রে তুলে, জ্ঞান আলোকে আলোকীত হয়ে উঠতে পারলেই দিব্য-সুন্দর জীবন লাভ করতে পারবো আমরা। —এটাইতো মানব জীবনে একান্ত কাম্য হওয়ার কথা। কিন্তু অসুস্থ মনের কাছে তা’ কাম্য নাও হতে পারে। তার কাছে আত্ম-ধ্বংসাত্মক পথই শ্রেয় মনে হতে পারে। সে শুধু নিজেকেই ধ্বংস করে না—সমাজ-সংসার-জগতটাকেও ধ্বংস করতে চায় সে! তার মনোভাব হলো— আমি শুধু একাই কষ্ট পাব কেনো! সবাইকে কষ্ট দিতে পারলেই তার সাময়ীক—অলীক সুখ অনুভূত হয়।
মহাধর্মের সাথে কারো বিরোধ থাকার কথা নয়, —একমাত্র অজ্ঞান-অন্ধ —অসুস্থ মন ছাড়া।
এখন, যারা তুলনামূলকভাবে সুস্থ আছে, —যারা এখনও জীবনকে ভালবাসে, তারা ভালভাবে বাঁচার জন্য, এই সমস্যার সমাধানের জন্য— অনেক পথ অনুসন্ধান করছে, —অনেক কিছুই চেষ্টা করছে। কিন্তু ঠিক যা করণীয়— তা’ না করার ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা এতটুকুও।
এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো— আত্মবিকাশ ও মানববিকাশ মূলক ধর্ম— মহাধর্ম। সমস্যাকে ভালোভাবে তলিয়ে বুঝতে শেখায় এই ধর্ম, সমস্যার মূলে নিয়ে গিয়ে তার সমাধানের পথ দেখায় এই ধর্ম। এমনকি, সমস্যা থেকে মুক্ত হ’তে সরাসরি সাহায্যও করে এই ধর্ম। এখন, একে গ্রহন করা কি ত্যাগ করা ব্যক্তি বিশেষের নিজের নিজের জ্ঞান-চেতনা— বিচার-বুদ্ধি, পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভরশীল।
প্রসঙ্গত জানাই— এই ধর্ম মূলতঃ জ্ঞান-পথের পথিকদের জন্য হলেও, ভক্তি-পথের পথিকদের জন্যও এই ধর্মে একটি আলাদা বিভাগ আছে। এই ধর্ম গ্রহন করতে ও অনুশীলন করতে— পূর্বের ধর্ম ত্যাগ করা অত্যাবশ্যক নয়। অর্থাৎ আপনি আপনার ধর্ম ত্যাগ না করেও এই ধর্ম অনুশীলনের মধ্য দিয়ে লাভবান হতে পারবেন।
এই ধর্মের মূলে রয়েছে— যুক্তিসম্মত অধ্যাত্মবাদের একমাত্র গ্রন্থ— ‘মহাবাদ’ (Google search= MahaVad) । মহাধর্ম অনুসরণ ও অনুশীলন করতে গিয়ে— মহাবাদের সমস্ত দর্শন ও মতবাদ আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে— গ্রহন করতে হবে, এমন নয়। যার যতটুকু ভালো লাগবে সে ততটুকুই গ্রহন করবে। এখানে মনোবিকাশ-ই হলো মূল কথা। অন্ধের মতো অনুসরণ মোটেই কাম্য নয়।