top of page

প্রসঙ্গ : ভয় ( আর্ট অফ হ্যাপী লার্নিং- ১২ )


প্রসঙ্গ : ভয়

ভয় হলো— আমাদের একটি সহজাত সংস্কার বা ‘প্রোগ্রাম’। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে জাগতিক-ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে ‘ভয়’ রূপ এই সংস্কার অন্তর্গ্রথিত ক’রে দিয়েছে, —যার জন্য আমরা ভয় পাই— ভয় করি বা ভীত হই।

কিন্তু কোনো কারনে—শারীরিক ও মানসিক গঠন, জৈব-রাসায়নিক বা গ্রন্থিরস ক্ষরণে, এবং আমাদের ‘মন-সফটওয়ার’-এর কার্যকলাপে তারতম্য ঘটলে, —এই ভয় কারো ক্ষেত্রে কম— কারো ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে। কেউ অল্পতেই ভয় পেতে পারে, —কেউ যথেষ্ট কারন ছাড়া ভয় পায়না।

ভয় পাওয়ার পিছনে আরো অনেক কারণ থাকে। কেউ ভয়ানক পরিবেশে দীর্ঘসময় থাকার ফলে, পরবর্তী কালেও সেই ভয় তার মধ্যে বাসা বেঁধে থাকতে পারে, আবার ঐ ভয়ঙ্কর পরিবেশে দীর্ঘসময় থাকার ফলে কারো কারো ভয় কেটে যেতেও পারে।

স্বল্প কারণে অথবা আপাত কারণ ছাড়া— উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পিছনে অনেক সময়েই পরিপাকতন্ত্র অথবা অন্য কোনো অরগানের উত্তেজনা দায়ী থাকে। তারমধ্যে— অম্লাধিক্য বা অত্যাধিক এসিড, কৃমি—জীবানু—পরজীবী, লিভারের উত্তেজনা, পাকাশয়ীক উত্তেজনা— এগুলিই প্রধান কারণ।

অত্যাধিক ভয়— অনেক সময় মানসিক রোগ হিসাবেও গণ্য হয়ে থাকে।

আসলে, যার মন যত বেশি যুক্তিবাদী— সে ভয়কে ততটাই জয় করতে সক্ষম। ভয় পাওয়ার পিছনে স্নায়ু-মনের দুর্বলতা আপাত কারণ হলেও, প্রধান কারণ হলো— চেতনার স্বল্পতা এবং অসহায়তা। যার জন্য শিশুরা বেশি ভয় পেয়ে থাকে। বেশি ভয় পাওয়ার পিছনে অন্ধ-বিশ্বাসও একটা বড় কারণ। চেতনার স্বল্পতাই অন্ধ-বিশ্বাসের জন্ম দেয়।

উদ্বেগ-উৎকন্ঠা —আশঙ্কা প্রভৃতি ভয়েরই সমগোত্রীয় সংস্কার। অনেক সময়েই এদেরকে আলাদা ক’রে চেনা মুস্কিল হয়ে যায়। অনেক সময়, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা —আশঙ্কার পিছনে বাস্তব কারণ থাকে। সেখানেও, কেউ অল্প কারণেই ভীত হয়, কেউ সেই ভয়কে সহ্য করতে পারে— নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আবার কেউ কোনো বাস্তব কারন ছাড়াই— কাল্পনিক কারণে অথবা অন্ধ-বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কিত হতে পারে।

কোনো কোনো সময়— আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ‘প্রোগ্রামড্‌’ ক’রে তুলি। এটা কেউ কেউ সচেতনভাবে—ইচ্ছাকৃতভাবেও ক’রে থাকেন, আবার অনেকে— নিজেদের অজ্ঞাতেই নিজেদেরকে ‘প্রোগ্রামড্‌’ ক’রে তোলেন। তবে, সচেতনভাবে যাঁরা নিজেদেরকে ‘প্রোগ্রামড্‌’ ক’রে তোলেন—তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে—ধনাত্মক (পজেটিভ) বা উন্নয়নমূলক ‘প্রোগ্রাম’ ক’রে থাকেন। আর যারা নিজেদের অজ্ঞাতেই নিজেদেরকে ‘প্রোগ্রামড’ ক’রে থাকেন, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঋণাত্মক (নেগেটিভ) বা অবনয়ন মূলক প্রোগ্রাম ক’রে থাকেন।

যেমন, একটি উন্নয়নমূলক ‘প্রোগ্রাম’ হলো— ‘আমি চেষ্টা করলেই করতে পারবো।’ আর একটি ঋণাত্মক প্রোগ্রাম হলো— ‘আমি পারিনা’ অথবা ‘আমার দ্বারা হবেনা।’ ভয়ের ক্ষেত্রেও, কেউ যদি ভয়কে মনে পুষে রাখতে চায়, কেউ যদি বলে, ‘ওরে বাবা— অঙ্ক দেখলেই আমার গায়ে জ্বর আসে।’ —সেক্ষেত্রে এই স্ব-অভিভাবনমূলক ‘প্রোগ্রাম’ তাকে অঙ্কের ক্ষেত্রে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত ক’রেই রাখবে!

একজন— মনের অধিকারী ‘মানুষ’ হয়েও, যদি আমরা মন সম্পর্কে সচেতন না হই, মন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হই, তাহলে আমদের মানব-জীবনই বৃথা। অন্ধ-আবেগ —অন্ধ-বিশ্বাসপ্রবণ যুক্তি বিহীন অবচেতন মনের দাস হয়ে— অজ্ঞানের উপাসক হয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে। একজন সচেতন মানুষ হয়ে— জ্ঞানের উপাসক হয়ে ওঠা আর সম্ভব হবেনা কোনো দিন।

কেউ যদি নিজেকে ‘স্বল্পচেতন’ বলে, চিনতে পারে, অথবা চিহ্নিত করতে পারে, এবং সেইসঙ্গে চেতনালাভের জন্য উচ্চাকাঙ্খী হয়ে উঠতে পারে, তাহলেই তার চেতনার দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকবে। আর কেউ যদি স্বল্পচেতন হওয়া সত্বেও— নিজেকে তা’ না মনে করে, বরং নিজেকে খুব জ্ঞানী—বুদ্ধিমান ভাবে, —তার চেতনার বিকাশ ঘটতে থাকবে খুব মন্থর গতিতে।

এবার, ছাত্র-ছাত্রীরদের লেখাপড়া এবং বিভিন্ন বিষয়ে ভয়ের কথায় আসছি। অনেকসময় ছাত্র-ছাত্রীদের সরল বিশ্বাসপ্রবন মনে ভয়ের সঞ্চার ক’রে থাকে— তাদের পরিবারের এবং/অথবা তাদের চারিপাশের কেউ না কেউ। ভয় দেখিয়ে তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া, তাদেরকে বাধ্য—বশীভূত ক’রে রাখার ঘটনা ঘ’টে থাকে কারো কারো ক্ষেত্রে। অভিভাবকদের কেউ অঙ্কে বা ইংরাজীতে ভীত হলে, সে যদি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে— তার সেই ভয় প্রকাশ করে, তাহলে— সেই ভয় ছাত্র-ছাত্রীদের মনেও সংক্রামিত হতে পারে। অনেক অভিভাবককেই দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীদের সাহসী ক’রে তোলা— যুক্তিবাদী ক’রে তোলা— তাদেরকে পজেটিভ ভাবনায় ভাবায়িত ক’রে তোলার পরিবর্তে, বরং তাদেরকে নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা করতে— ভয় পেতেই বেশি প্ররোচিত ক’রে থাকেন। তারা ভাবেন, এতেই বুঝি ভালো হবে। কিন্তু, তা’ না হয়ে— ভবিষ্যতে সেই প্ররোচনার কুফল তদেরকেই ভোগ করতে হয়।

কেউ কোনো বিষয় ভালোভাবে বুঝতে না পারলে, আয়ত্ত করতে না পারলে— তাকে সেই কাজ করতে বললে, তার পক্ষে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রাঞ্জলভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব যার উপর দেওয়া হয়েছে, সে কি তার দায়ীত্ব পালন করছে?

একেবারে উপরতলা থেকে নীচুতলা পর্যন্ত— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, প্রজা—অধস্তন—শিষ্য—সন্তানদের বোকা বানিয়ে রাখার এক নিদারুণ অপচেষ্টা লক্ষ্য করার মতো। এই ওপরচালাকীর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে আজ সবাইকে। দেশ—সমাজ—সংসার সর্বত্রই আজ যে দুর্দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার অন্যতম কারণ— এই বোকা ব’নে থাকা এবং সেইসাথে বোকা বানিয়ে রাখার এক করুণ প্রচেষ্টা। জ্ঞানের উপাসনা ছেড়ে— অজ্ঞানের উপাসনাই আজ এই দেশের দুরবস্থার প্রধান কারণ।

বিশদভাবে জানতে, এই ওয়েবসাইট দেখুন-- http://sumeru.wix.com/classes

Follow Me
  • Twitter Long Shadow
  • Google+ Long Shadow
  • Facebook Long Shadow
  • LinkedIn Long Shadow
Search By Tags
No tags yet.
bottom of page