দক্ষতা লাভ এবং দক্ষতার বিকাশলাভের গোড়ার কথা
আত্মবিকাশ শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি বিষয় হলো— দক্ষতা লাভ এবং দক্ষতার বিকাশলাভের মূলগত শিক্ষা।
দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে আরম্ভ ক’রে— নিজের নিজের পেশাগত কর্মসহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনিপুন—সুদক্ষ—কৌশলী হয়ে ওঠা এবং সেই বিষয়গুলিতে যথেষ্ট জ্ঞানলাভ করা আবশ্যক। নিজের কাজটি— কর্তব্যকর্মটি যে যত নিপুনভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সে ততটাই সফল হয়ে উঠতে পারবে, এবং ততবেশি আনন্দলাভ করতে পারবে জীবনে।
দক্ষতালাভের মূলে আছে—দক্ষতালাভের ইচ্ছা— চাহিদা ও চেষ্টা, আর কাজের প্রতি ভালোবাসা। এই ইচ্ছা— চেষ্টা আর ভালোবাসাই হলো প্রথম ও প্রধান কথা।
প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে— প্রয়োজনবোধ তীব্র হয়ে উঠলে, একজন সুস্থ মানুষের মধ্যে এই ইচ্ছা ও চেষ্টা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জাগ্রত হয়ে থাকে। পরিবেশ-পরিস্থিতি, সুযোগ-সুবিধা অনুকূলে থাকলে, একজন ব্যক্তি অল্প আয়াসেই দক্ষতালাভে সক্ষম হতে পারে।
কিন্তু, ঐগুলি থাকা সত্বেও যদি কারোমধ্যে দক্ষতালাভের ইচ্ছা ও চেষ্টার অভাব দেখা যায়, অথবা যদি তার ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকা সত্বেও সে দক্ষতা অর্জনে অপারক হয়, বুঝতে হবে—তার শরীর ও মন যথেষ্ট সুস্থ নেই। সেক্ষেত্রে তার প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসা।
অনেকসময়, অপরকে দিয়ে— অপর কোন দক্ষকর্মীকে দিয়েও কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রেও, সেই কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না— তা’ দেখতে হবে। আর তা’ দেখতে ও বুঝতে হলেও— সেই বিশেষ কাজটি সম্পর্কে এবং তার ফলাফল সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আর তা’ না থাকলে, অনেক ক্ষেত্রেই ঠকতে হবে— ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
পূর্বেই বলেছি, দক্ষতালাভ করতে হলে— এক্সপার্ট হতে হলে, কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। ভালোবাসাই সমস্ত বাধা-বিঘ্ন—অক্ষমতাকে দূর ক’রে—এগিয়ে নিয়ে যাবে, জয়ী ক’রে তুলবে। এককথায়, কর্মযোগী হতে হবে। কাজের মধ্যেই আনন্দলাভ করতে হবে। আর চাই— সচেতনতা, সজাগ—সতর্কতা।
যুক্তিবাদীর দৃষ্টিতে— খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়ে সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। কর্মপদ্ধতি— কর্মধারার যুক্তি-বিজ্ঞানসহ প্রযুক্তিটা বুঝে নিতে হবে ভালভাবে। দক্ষতালাভের জন্য দক্ষব্যক্তির সহায়তা নিতে হবে। চোখ—কান—মন সর্বদা খোলা রেখে, কাজটি ঠিক কিভাবে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে— তা’ মনযোগ দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হবে— বুঝতে হবে। পরবর্তীকালে, কাজটি করার সময় অথবা চেষ্টা করার সময়— সঠিকভাবে তা’ অনুসরণ করতে হবে। যুক্তি-বিচার-বিবেচনাসহ অনুকরণ করতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। কাজ করতে করতে— আরো উন্নত ‘আইডিয়া’ মনে জাগ্রত হতে পারে। প্রয়োজনে, কর্মপদ্ধতির উন্নতি ঘটানো যেতে পারে।
সৃজনশীল হতে হবে। গঠনমূলক— উন্নয়নমূলক— সৃজনমূলক কর্মের মধ্যেই সবচাইতে বেশি আনন্দলাভ হয়ে থাকে। কাজটিকে সহজে— অল্পসময়ে যথাসম্ভব কম খরচে, সঠিকভাবে সম্পন্ন ক’রে তুলতে, তাকে আরো উন্নত ক’রে তুলতে—নতুন উপায় আবিষ্কার করার মধ্যেও অনেক আনন্দলাভের সাথে সাথে— পুরস্কার লাভও ঘটতে পারে।
‘আমি পারবো না’ —এই ধরণের ঋণাত্মক মনোভাব থাকলে, তা’ বর্জন করতে হবে সর্বাগ্রে। ‘আমি পারবো, চেষ্টা করলেই পারবো’, অথবা ‘শিখিয়ে দিলেই পারবো’ —এইরূপ ধ্বনাত্মক মনোভাবই একজনকে কর্মদক্ষ ক’রে তুলতে সক্ষম।
মস্তিষ্কসহ শরীর ও মনের জড়তা থাকলে— তা’ দূর করতে হবে। আলস্যতা দূর করতে হবে। আগ্রহী— উৎসাহী— কর্মোদ্যমী হতে হবে। বিষয়ের প্রতি— কর্মের প্রতি একাগ্র— মনোযোগী হতে হবে। দক্ষতালাভ করতে— এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে ধৈর্যশীল হতে হবে। অসহিষ্ণু—অধৈর্য—অস্থির হলে হবে না।
দক্ষতালাভ করতে এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে, বোঝার ক্ষমতা বোধশক্তিকে প্রখর ক’রে তুলতে হবে। সচেষ্ট— যত্নবান— পরিচ্ছন্ন, পরিশ্রমী হতে হবে। শরীর ও মনের জড়তা দূর করতে— বিভিন্ন প্রকারের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুশীলণ করা যেতে পারে। এছাড়া, কর্মদক্ষ হওয়ার জন্য মস্তিষ্কের উভয় ‘লোব’কে সক্রিয় করে তুলতে— উভয় হাতের নিয়মিত ব্যবহার —অভ্যাস করা যেতে পারে, এবং বিভিন্ন শব্দ (ওয়ার্ড)কে মাঝেমাঝে— ডানদিক থেকে বাঁ দিকে লেখার অভ্যাস করা যেতে পারে।
Visit- www.mahamanan.wix.com/university